তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন কি, জেনে রাখুন
"সাইবার ক্রাইম" হচ্ছে কম্পিউজার প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে সংগঠিত অপরাধ। এই ধরনের অপরাধ আমাদের দেশে আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কখনও কখনও অজ্ঞতাবসত বা আবেগের বসবর্তী হয়ে অনেকে এই আইনের আওতায় অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছেন। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩)। যদিও এই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে নানা মহলে বিতর্ক রয়েছে।
এই আইনটি মূলত প্রণিত হয়- কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম, ইত্যাদির অনিষ্ট সাধন (৫৪ ধারা), কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ (৫৬ ধারা), ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ (৫৭ ধারা) ইত্যাদি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অনেকেই মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ব্লগ ও অনলাইন সংবাদ পত্র ব্যবহার করছেন। একটি মহল মনে করে এই আইনের ৫৭ ধারাটি পরিবর্তন করা জরুরী। তা না হলে নাগরিক তার স্বাধীন মত প্রকাশে বাধাগ্রস্থ হবে। আবার এও বাস্তব যে, কারনে অকারণে লেখা বা চিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর কাছে মানসম্মান নষ্ট করা হচ্ছে অহরহ।
আমাদের দেশে অধিকাংশই অভিযোগ পাওয়া যায় ভুয়া ফেসবুক আইডি, হ্যাকড ফেসবুক আইডি, বিভিন্ন ধরনের পর্নোসাইটে ব্যক্তিগত ছবি পোষ্ট দেয়া সংক্রান্ত। ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে সাইবার ক্রাইমের শিকড়ও বেশ পোক্ত ভাবে গেঁড়ে বসছে আমাদের দেশে। এটি একটি বিস্তীর্ণ অপরাধ জগৎ। এর আওতায় ওয়েব সাইট হ্যাকিং, ব্যাংক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনলাইন পদ্ধতি হ্যাকিং এর মাধ্যমে প্রবেশ করে তথ্য ও অর্থ চুরি ইত্যাদি প্রকারে জালিয়াতি।
তাহলে আমাদের দেশে ব্যাপক সংগঠিত “তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) এর অধীন সংগঠিত অপরাধ ও তার দন্ডঃ-
ধারা ৫৪- কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম, ইত্যাদির অনিষ্ট সাধন: কোন ব্যক্তি এই ধারায় অপরাধ করিলে অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং নূন্যতম সাত বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক দশ লক্ষ্য টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
ধারা ৫৬- কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ: কোন ব্যক্তি এই ধারায় অপরাধ করিলে অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং নূন্যতম সাত বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
ধারা ৫৭- ইলেক্ট্রনিক ফরমে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধ: কোন ব্যক্তি এই ধারায় অপরাধ করিলে অনধিক চৌদ্দ বৎসর এবং নূন্যতম সাত বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা অনেক বেড়েছে। যদি সাইবার প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করা হয়, যা মিথ্যা অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা ও বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে বিপথগামী হতে পারেন বা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়, উস্কানী প্রদান করা হয় তা হলে এটি সাইবার অপরাধ।
এই আইনের ৫৪, ৫৬, ৫৭, ৬১ ধারার কোন একটি ধারায় অপরাধ করলে সর্বনিন্ম সাজা হবে ৭ বছর ও সর্বোচ্চ সাজা হবে ১৪ বছর। আর যদি কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীনে মামলার আসামী হয়ে গ্রেফতার হন তবে তাকে দীর্ঘদিন হাজত বন্দি থাকতে হবে। এই আইনের আওতায় বিচারকার্য পরিচালনার জন্য বর্তমানে দেশে একটি মাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে।
মোঃ শরীফুল ইসলাম শিপলু
এডভোকেট,নারায়ণগঞ্জ।