২০১৯-২০ কর বছরে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সংক্রান্ত আলোচনা - ১
২০১৯-২০ কর বছরে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন সংক্রান্ত আলোচনা - ১

 

শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর, ২০১৯-২০ কর বছর। রিটার্ন দাখিলকারী আয়-ব্যায় হিসাব-নিকাশ করবেন ২০১৮ সালের ১লা জুলাই থেকে এ বছর তথা ২০১৯ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত। প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দেওয়া যায়। তবে শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে আপনি আগেভাগেই বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে করযোগ্য আয় থাকলে কর দিতে হবে। এখন আপনি হিসাব করে দেখুন, কত আয় করলেন।

 

করমুক্ত আয়সীমা বিগত বছরের মতোই আড়াই লাখ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। গত চার বছর ধরেই করমুক্ত আয়সীমায় পরিবর্তন আনা হয়নি। সে মোতাবেক ২,৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর করহার শূন্য; পরবর্তী ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১০%; পরবর্তী ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ১৫%; পরবর্তী ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২০%; পরবর্তী ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ২৫%; অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর ৩০% হারে কর দিতে হবে। তবে মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বৎসর বা তদুর্ধ্ব করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হইবে ৩ লক্ষ টাকা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লক্ষ ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লক্ষ ২৫ হাজার করা হয়েছে।

 

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ন্যূনতম কর ৫০০০/- টাকা; নারায়ণগঞ্জ সহ অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য ন্যূনতম কর ৪০০০/- টাকা; এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা দিতে হবে।

 

সঞ্চয়পত্রসহ যেসব খাতে বিনিয়োগ ও দানের করলে কর ছাড় রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর তালিকা নিচে উল্লেক করা হলোঃ

  • জীবন বীমার পিমিয়।
  • সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা।
  • স্বীকৃত ভবিষ্যত তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা।
  • কল্যাণ তহবিল ও গোষ্টী বীমা তহবিলে চাঁদা।
  • গুপার এনুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা।
  • যে কোন তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্বীমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০,০০০/- টাকা বিনিয়োগ।
  • সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ।
  • বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ।
  • বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ট্রেজারী বন্ডে বিনিয়োগ।
  • জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান।
  • যাকাত তহবিলে দান।
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোন দাতব্য হাসপাতালে দান।
  • প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দান।
  • মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘওে প্রদত্ত দান।
  • আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কে দান।
  • আহসানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালে দান।
  • ICDDRB তে প্রদত্ত দান।
  • CRP, সাভারে প্রদত্ত দান।
  • সরকার কর্তৃক অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষ প্রতিষ্ঠানে দান
  • এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ এ দান
  • ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে দান
  • মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠানে অনুদান।

 

বার্ষিক আয়ের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ এবং ১৫ লাখ টাকার বেশি আয় হলে ১০ শতাংশ হারে কর রেয়াত পাওয়া যাবে।

 

কম্পিউটার-ল্যাপটপ কিনলে বিগত বছরে কর রেয়াত পাওয়া যেত। ২০১৯-২০ কর বছর এই কর রেয়াত সুবিধা মিলবে না।

 

বিগত বছরে করদাতার সোয়া দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলেই সারচার্জ দিতে হতো। এবার এই সীমা বাড়িয়ে তিন কোটি টাকা করা হয়েছে। কোনো করদাতার যদি নিজের নামে দুটি গাড়ি থাকে কিংবা সিটি করপোরেশন এলাকায় আট হাজার বর্গফুট আয়তনের এক বা একাধিক ফ্ল্যাট বা গৃহসম্পত্তি থাকে, তাহলে তাতে সারচার্জ আরোপ হবে। নীট পরিসম্পদ ৩ কোটি টাকার অধিক তবে ৫ কোটি টাকার অধিক নয় ১০%; ৫ কোটি টাকার অধিক তবে ১০ কোটি টাকার অধিক নয় ১৫%; ১০ কোটি টাকার অধিক তবে ১৫ কোটি টাকার অধিক নয় ২০%; ১৫ কোটি টাকার অধিক তবে ২০ কোটি টাকার অধিক নয় ২৫% এবং নীট পরিসম্পদ ২০ কোটি টাকার অধিক যে কোন অংকের জন্য ৩০% হারে কিছু শর্ত সাপেক্ষে সারচার্জ প্রদান করতে হবে।

 

সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও জেলা সদরে এক লাখ টাকার বেশি জমি স্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচা বা হস্তান্তরের সময় টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দলিলে ক্রেতা-বিক্রেতার টিআইএনের উল্লেখ থাকতে হবে। টিআইএন ছাড়া জমি কেনাবেচা করা যাবে না।

 

১০ পেশাজীবীর আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই তালিকায় আছেন চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, হিসাববিদ, ব্যয় ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশেষ হিসাববিদ, প্রকৌশলী, স্থপতি, জরিপকারী, আয়কর পেশাজীবী এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা স্থানীর সরকারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদার। গত বছর থেকে ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে সব বেসরকারি চাকরিজীবীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তাছারা উবার, পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিংয়ে গাড়ি দিলেও বছর শেষে রিটার্ন দিতে হবে।

 

শুধু আয়কর ও সম্পদ বিবরণীর ফরম পূরণ করে দিলেই হবে না, আয় কিংবা বিনিয়োগ করে কর রেয়াতের বিপরীতে বেশ কিছু কাগজপত্র আয়কর বিবরণীর দলিলের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এ জন্য যেসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে; সেগুলোর অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌর করের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।

 

কোনো করদাতা যদি কর রেয়াত নিতে চান, তবে বেশ কিছু কাগজপত্র লাগবে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, স্টক বা শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলে চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে চাঁদার সনদ।

আরও টিপস